রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ৬ জুলাই ২০২২:

নানা আয়োজন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘এসো উৎসুকচিত্ত, এসো অবারিত প্রাণ’ শীর্ষক কর্মসূচির শুরুতে সকাল ১০টায় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনভবন চত্বরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার জাতীয় পতাকা ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও উপ-উপাচার্য প্রফেস চৌধুরী মো. জাকারিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা এবং প্রাধ্যক্ষবৃন্দ নিজ নিজ হলের পতাকা উত্তোলন করেন। তারপর শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও বর্ণিল বেলুন-ফেস্টুন ওড়ানোর মধ্য দিয়ে উপাচার্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এসময় সেখানে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম, সিন্ডিকেট সদস্য, অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, প্রক্টর প্রফেসর মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে উপাচার্য সাবাস বাংলাদেশ চত্বরে একটি গাছের চারাও রোপণ করেন।

বেলা ১১টায় শহীদ শহীদ উদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। এছাড়া আলোচক হিসেবে ছিলেন গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর সুব্রত মজুমদার ও বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর চৌধুরী জুলফিকার মতিন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। উপাচার্য বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে চলেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজ নিজ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।

দেশের আন্দোলন-সংগ্রামেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসুরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গৃহিত কর্মসূচির আলোকে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভৌত কাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নসহ পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের প্রসারে কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে রোল-মডেলে পরিণত করতে চাই যাতে এখান থেকে বিশ্বমানের সুনাগরিক তৈরি হয়। সে লক্ষ্য অর্জনে উপাচার্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রসঙ্গক্রমে উপাচার্য বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ গবেষণা প্রয়োজন। কে কিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য সংকলনের কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা ধারণার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের জন্য উদ্ভাবন ও উন্নয়নের যে সুযোগ সৃষ্টি করেছে তার অংশীদার হতেও তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানন্নোয়ন সম্পর্কে তিনি উল্লেখ করেন যে, উচ্চশিক্ষার বৈশ্বিক অঙ্গনে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরতে র‌্যাংকিং-এ অবস্থান করে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে সেই সাথে মানবিক মানুষ হয়ে গড়ে উঠারও আহ্বান জানান। সেই লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান।

উপাচার্য আরো উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব উচ্চশিক্ষা তথা সামগ্রিকভাবে শিক্ষার উন্নয়ন বরাদ্দে উদার ভূমিকা রাখছেন। এই সুযোগ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবকাঠামোগত তথা সুযোগ সুবিধার দিকে থেকে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতবিদ্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপাচার্য শিক্ষকদের জন্য নতুন একটি মিনিবাস ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য রাবির বিভিন্ন বিভাগের গবেষণাগার পরিদর্শন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

প্রফেসর প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক