রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ২৬ নভেম্বর ২০২২
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আজ শনিবার বাংলাদেশ ফিলোসোফিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস) এর তৃতীয় জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘সুশাসনে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যা’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে  বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজ্উদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে রাবি দর্শন বিভাগের আয়োজনে দিনব্যাপী এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
 
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্যদ্বয় অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম ও অধ্যাপক এম হুমায়ুন কবীর এবং কলা অনুষদের অধিকর্তা  অধ্যাপক মো. ফজলুল হক।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএস সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মো. সাজাহান মিয়া। সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে  উপস্থিত ছিলেন রাবি দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নিলুফার আহমেদ।
 
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে বিপিএস-এর সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, বতর্মান সময়ে সুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যার সাথে গভীরভাবে জড়িত নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যা। সমাজে বিভিন্ন সমস্যা বিরাজমান। এসব সমস্যা নিরসরে সুশাসনের বিকল্প নেই। সেজন্য দরকার নীতি-নৈতিকতা সম্পূর্ণ একটি জনগোষ্ঠী যারা যুক্তিযুক্ত চিন্তার অধিকারী হবে।  
 
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম হুমায়ুন কবীর বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব অনেক। তাছাড়া জ্ঞানচর্চা, শিক্ষা ও মানব কল্যাণে দর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদিকে সুশাসন বতর্মান বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। সুশাসন ছাড়া জাতির অধিকার সংরক্ষণ সম্ভব নয়। তাই সুশাসনে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যা বিষয়ক এই সেমিনার দেশের সার্বিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি।
 
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম বলেন, দেশ, জাতি ও মানব কল্যাণে দর্শন একটি প্রাচীন চিন্তাপদ্ধতি। সেটারই অন্যতম শাখা নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যা। আদর্শবান জাতি গঠনে নীতিবান হওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনি কথা-কাজে যৌক্তিকতা থাকা জরুরি। এছাড়া একজন মানুষ সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। অন্যদিকে দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে সুশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ। শক্তি দিয়ে সবকিছু জয় সম্ভব নয়। নীতিবান ও যুক্তিবাদী জনশক্তি একটি দেশ জাতিকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এই সেমিনার সকলের জন্য নতুন একটি দিকনির্দেশনা দিবে। 
 
দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনীম নাদিরা রিদার সঞ্চালনায় সেমিনারে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, অধ্যাপক শাহ্ কাউছার মুস্তফা আবুলউলায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মহেন্দ্রনাথ অধিকারী, এস এম আবু বকর, অধ্যাপক আক্তার আলী, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আমল, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বাদশা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক তৌহিদ হাসান, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল শাহিন খান, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক মাছুম আহমেদ, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি অব বরিশালের উপাচার্য অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কালাচাঁন্দ শীল, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলাম ও দর্শন বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। 
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বর্তমান সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চপর্যায়ে উপনীত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম দর্শনচর্চা। দর্শন মূলত জ্ঞানের প্রতি অনুরাগ এবং মুক্তচিন্তার প্রসার। তবে এটা করতে গিয়ে যুগে যুগে অনেক দার্শনিক নির্যাতিত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে অনেক দার্শনিকের সেই চিন্তাচেতনা সত্য বলে বিবেচিত হয়েছে এবং অনেক জাতি সেটার অনুসরণ করেছেন। সেদিক থেকে ভারতের দর্শন চিন্তা ছিল অনেক সমৃদ্ধ। বৌদ্ধ ও চার্বাকদের দর্শন মানব কল্যাণ ও মুক্তচিন্তার অন্যতম নিদর্শন। এমনকি ‘৭১ সালে বঙ্গবন্ধু পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালির মনে মুক্তির যে চেতনার উদয় ঘটিয়েছিলেন, সেটা ছিল তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। যার ফলে কৃষক, শ্রমিক, জেলেসহ সর্বস্তরের মানুষ মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল ক্ষেত্রে দর্শনের ভূমিকা রয়েছে৷ সেজন্য সুশাসনের ক্ষেত্রে নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব রয়েছে।
 
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. সাজাহান মিয়া বলেন, ব্যক্তিগত, পেশাগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়ে দার্শনিক চিন্তাভাবনা, নৈতিক মূল্যবোধের অনুশীলন এবং এটাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে জনপ্রিয় করার প্রত্যয় নিয়েই ফিলোসোফিকাল সোসাইটি গঠিত হয়েছে। যার উদ্দেশ্য পেশাগতভাবে যারা দর্শনচর্চার সাথে জড়িত তাদের পেশার মান উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা দূর করা, বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে দর্শনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা, বৈশ্বিক ও জাতীয় ক্ষেত্রে আর্থ- সামাজিক, রাজনৈতিক সংকট নিরসন ও মানব সম্পদ তৈরিতে বুদ্ধিবৃত্তিক দিকনির্দেশনা বিষয়ক কাজ করা।  সেই লক্ষ্যে প্রতিবছর বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 
 
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই তৃতীয় জাতীয়  সেমিনারে ৯টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছে।  রাজশাহী, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্রগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক ও গবেষকসহ প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এই সেমিনারে অংশ নেন।
সেমিনারটি উপস্থাপনা করেন রাবি দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনিম নাজিরা রিদা।
 
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে 
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর