রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১০ জানুয়ারি ২০২৩:
আজ ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়। এদিন সকাল ১০:৩০ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। সেখানে বিশেষ মোনাজাতও করা হয়। এসময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষসহ অন্যান্য বিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ২০২৩ উদযাপন কমিটির সভাপতি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা ও মুখ্য আলোচক ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ও বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষসহ বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ১০ জানুয়ারি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। এদিনে পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় পূর্ণতা পায়। ১১ জানুয়ারি তিনি অন্তবর্তীকালীন সংবিধান জাারি করে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি করেন। এছাড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটিও গঠন করেছিলেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি তিনি ঘোষণা করেন। ভাষা ও সংস্কৃতিকেন্দ্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তিনি দৃঢ় অবস্থান নেন। বঙ্গবন্ধু জোট নিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাস করতেন। স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি কমনওয়েলথের সদস্য পদে আসীন করেন। তাঁর নেতৃত্বেই শুরু হয় লাখো শহীদের আত্মদানে মুক্ত স্বদেশ পুণর্গঠনের অভিযাত্রা। মুক্ত বাংলাদেশে ফিরে এসে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারে তাঁর পদক্ষেপ ছিল অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য।

সম্মানিত অতিথি বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে যা লিখিত হয়েছিল বাস্তবিক ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ ছিল অনেক কঠিন। বঙ্গবন্ধু সেই কঠিন কাজটা করতে চেয়েছিলেন। বাঙালি হবার মানবিক দিকটি ছিল তাঁর স্বপ্নে। আমরা চর্যাপদে প্রথম বাঙালি শব্দটি পেয়েছিলাম। কিন্তু এই বাঙালিকে পরিচিত করার স্বার্থক প্রয়াস নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। শুধু বাঙালি হওয়া নয়, মানুষ হবার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র চেয়েছিলেন যাতে করে আপামর জণগোষ্ঠী অন্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। একটি রাষ্ট্র কাঠামোতে সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক কাতারে নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা আরো বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি কিন্তু বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ দিয়েছিলেন সেটা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শুধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ছিলেন না, তিনি ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তিনি তাঁর শত্রুকেও সমানভাবে দেখেছেন। এমনকি তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। বহু চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি যখন দেশ পুনর্গঠনে হাত দিলেন ঠিক তখনই ঘাতকেরা তাঁর স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও পালন করার আহ্বান জানান তিনি।

উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। তিনি ফিরে না আসলে আমরা এতিম জাতিতে পরিণত হতাম। বঙ্গবন্ধু বাংলার লোকায়ত দর্শনকে ধারণ করতেন। তিনি যে রাষ্ট্রের ঘোষণা করেছিলেন তার ভিত্তি ছিল ভাষা, ধর্ম নয়। ভাষা ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়ায় এর অসাধারণ শক্তি আছে। বঙ্গবন্ধু এ কারণে ভাষাকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক দর্শনকে নিয়ে আরো গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা করতে হলে বঙ্গমাতা ও ইন্দিরা গান্ধীর কথাও বলতে হবে। ৯ জানুয়ারি তাজউদ্দিন আহমদকে বঙ্গমাতার কাছে নিয়ে আসেন তাঁর জামাতা। ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চিন্তা করতেন, ভাইয়ের মতো করে দেখতেন। ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তা না পেলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হতো বলে তিনি উল্লেখ করেন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে বাস্তবে রূপ দান করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় হয়ে উঠবে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হোক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের শপথ।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মুক্ত স্বদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পায়। বঙ্গবন্ধু জাতিকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই বাঙালি স্বাধীন হতে পেরেছিল। আজ আমরা যে বিশ্বের কাছে মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছি তার অনুপ্রেরণা বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে ধারণ ও লালন করার জন্য তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতিও আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও চর্চা করলে আমরা সকল বাধা অতিক্রম করতে পারবো বলে তিনি উল্লেখ করেন। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে যারা বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে তাদেরকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, জ্বালানি, স্বাস্থ্য ও অর্থ সবক্ষেত্রে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের সভাপতি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করে। মুক্ত স্বদেশে ফিরে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা করেছিলেন। বিজয়ের পর তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন জাতিকে নেতৃত্ব দিতে। এই সময়ের মধ্যেই তাঁর অর্জন ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাতি বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে হয়ে পড়ে দিশেহারা, গতিহীন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে দেশ আবার এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে একবিংশ শতাব্দীর স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করতে তিনি নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। স্বপ্ন পূরণের এই অভিযাত্রায় এগিয়ে যেতে উপ-উপাচার্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর