রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭ মে ২০২৩:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আজ বুধবার বঙ্গবন্ধুকন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করা হয়। এই উপলক্ষে সকাল ১০:৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ মোনাজাত করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণকালে অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল ১০:২০ মিনিটে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে এক শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে যায়।

এদিন বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ আলোচনা সভা। এই আয়োজনে মুখ্য আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. শহীদ হোসাইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম।

সভায় মুখ্য আলোচক ড. শহীদ হোসাইন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৩ মার্চ পশ্চিম জার্মানির কার্ল¯্রুহে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে যখন ড. ওয়াজেদ মিয়া এসেছিলেন তার আগেই বুয়েট থেকে শিক্ষা ছুটি নিয়ে আমি সেখানে পিএইচডি গবেষণার জন্য যাই। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা সস্ত্রীক সেখানে হাজির হয়েছিলেন। শুধু তাই নয় আরও এসেছিলেন অনেক প্রবাসী বাঙালি। ওয়াজেদ ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু দেরি হয়ে যাবে বলে আমি তাকে একাই যেতে বলি। শেষ পর্যন্ত আমরা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাইনি। ভেবেছিলাম পরে দেখা হবে, কিন্তু সে সৌভাগ্য আর হয়নি। ৯ আগস্ট তারা সবাই জার্মানি ছেড়ে চলে গেলেন। আমার খুবই খারাপ লাগলো। পরবর্তী সময়ে তারা আবার ১৮ আগস্ট জার্মানীতে ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার নিরাপত্তার কথা ভেবে ওয়াজেদ ভাইকে সবসময় বিচলিত দেখতাম। ঘরে ঢোকার দরজার তালা বার বার বন্ধ করেও ভাবতেন খোলা আছে। ওয়াজেদ ভাই আমাকে বলেছিলেন শহীদ তুমি আমাদের সঙ্গে থাকো, আমার কেন জানি ভয় ভয় লাগছে। ফলে গেস্ট হাউজে তাদের পাশের দুটি কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়। আমি এবং আমিরুল ইসলাম বাবলু মাঝে মধ্যে সেখানে থাকতাম। ২৩ আগস্ট বাজার করে নিয়ে আসলাম, রান্নাও করলাম কিন্তু খাওয়ার সময় দেখি কারো মুখে রুচি নাই। হাসিনা আপা মাঝে মধ্যে বাসি ভাত কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজতেন। এটাই ছিলো আমাদের সকালের নাস্তা। নিজে থেকেই টুকিটাকি কাজ করে দিতাম। বাজার করে আনতাম, রান্নার কাজে সহযোগিতা করতাম। রেহানা আপা তখন একটা আলাদা ভুবন তৈরি করে নিয়েছিল, সে খাতায় কি যেন আঁকতো। অন্যান্য অনেক কিছু লিখতো, এই নিয়েই তার ব্যস্ততা ছিলো। হাসিনা আপা একদিন এসে বললেন শহীদ আমরা এ ঘটনা ঘটার পরে দোয়া দরুদ সব তো ভুলে গেছি। মাসখানেক আগে হাসিনা আপা আমাকে বললেন দেখো শহীদ তোমার লেখা দরুদ এখনো আছে। হাসিনা আপাকে দেখতাম তিনি সবসময় সবকিছু নিজের হাতে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতেন। সবার অভিভাবক হিসেবে তিনি হয়তো স্বাভাবিক থাকতেন। অভ্যুত্থানের খবর জানার জন্য হাসিনা আপা এবং ওয়াজেদ ভাই ব্যাকুল থাকতেন। কিন্তু সেখানকার টেলিভিশন তো ছবি দেখায় কিন্তু তা বুঝতে পারতাম না। তাছাড়াও টেলিভিশনটাও ছিলো পুরাতন। আমি আমার ঘরের টেলিভিশনটা নিয়ে গেলাম, ঐটাও একই। ২৫ আগস্ট তারা দিল্লীতে পৌঁছায়। এরপর হাসিনা আপা, পুতুল কলকাতায় পৌঁছায়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে হাসিনা আপা ঢাকায় আসেন। সেখানে তাকে রিসিভ করার জন্য ১২ লাখ মানুষের মতো জড়ো হয়ে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জানান। সেদিনই শেখ হাসিনা আত্মনিয়োগ করেন মানবতার সেবায়।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ দুটি জমজ শব্দ। কেননা এদেশের মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, সেটা জাতি জানে। তাঁরই রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নির্ভীক চিত্তে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। আজ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার রূপকার এই বঙ্গবন্ধু কন্যা। কিন্তু এই পথ এতো সহজ ছিল না। ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাকে দেশ থেকে নির্বাসিত করেছিল। দেশে ফেরার পরেও বহুবার তাঁকে হত্যা চেষ্টা করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। কিন্তু তারা সফল হয় নি। বরং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে একাই লড়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরেই উন্নয়ন আজ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। বাঙালি পরিচিত হয়েছে স্মার্ট জাতি হিসেবে।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সেদিন এদেশের মানুষ যখন স্বৈরশাসনে অতিষ্ঠ, তখন এদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সেই থেকে শুরু করে বহু ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে এই দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সংগ্রামী চেতনা ও জাতির কল্যাণে দূরদর্শিতায় বাঙালি মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছে। অথচ স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর মতো তাঁকেও বহুবার হত্যার ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। এদের উন্নয়নকে দমিয়ে রাখতে নানামুখী প্রচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু সকল প্রতিবন্ধকতা রুখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হিসবে খ্যাতি পেয়েছে।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, আজকের এই দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশে ফিরে আসেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে আমাদের দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। সেদিন বিমানবন্দরে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও লাখো জনতা যেভাবে আমাদের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে সেটি সত্যি ইতিহাসের সাক্ষী। সেদিন তিনি একটি কথা বলেছিলেন আমি সবি হারিয়েছি, আমি আপনাদেরকে দেখে আপ্লুত, আমি আপনাদের মাঝেই আমার বাবা-মা, আমার ভাই, আত্মীয়-স্বজনকে ফিরে পেতে চাই এবং আমার জীবনকে উৎসর্গ করতে চাই সমৃদ্ধির জন্য, বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের মুক্তির জন্য এবং যেভাবে ৭৫ এ হত্যাকান্ড হয়েছে, সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে। সেই প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী তিনি ৪২ বছর ধরে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে প্রমূখ।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক