রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পুত্র-কন্যা ভর্তির রেওয়াজ দীর্ঘদিন যাবত প্রচলিত আছে। বাংলাদেশের অন্যান্য সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ধরনের সুবিধা চলে আসছে। চলতি ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষেও সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পুত্র-কন্যা ভর্তি করা হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এই রেওয়াজকে বৈষম্যমূলক ও জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী চেতনার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানায়। তারা এও জানায় যে, অতীতে ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর না পাওয়া সত্ত্বেও ভর্তির নজির আছে, যা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির ধারাকে ক্ষুণ্ন করে। কিছুক্ষেত্রে অভিভাবকের বিভাগে ভর্তি হয়ে পুত্র-কন্যারা বিশেষ সুবিধা ভোগ করে বলেও তারা অভিযোগ করে। এই বিষয়ে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি দিয়ে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবি জানায়। ৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবির প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। তারা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে এই ভর্তির ধারা বহাল রাখার দাবি জানায়।

কর্তৃপক্ষ তখন ‘পোষ্য কোটা’র বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)কে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেন। কমিটি ১১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে সভায় মিলিত হয়ে সর্বসম্মতভাবে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট আসন সংখ্যার অতিরিক্ত হিসেবে পূর্বের ৫% থেকে কমিয়ে ৩% ভর্তির জন্য সুপারিশ করে। ১২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে কমিটি প্রতিবেদন দেয়।

১৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির সভায় ১৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপ-কমিটির সুপারিশসূত্রে “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুত্র/কন্যা কোটায় প্রতি বিভাগ/ইনস্টিটিউটের আসন সংখ্যার ৩% এর বেশি নয়।” মর্মে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

একই দিন সন্ধ্যা থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের সামনের চত্বরে ‘পোষ্য কোটা’ বাতিলের দাবিতে অনশন শুরু করে। ১৫ নভেম্বর ২০২৪ দুপুরে উপাচার্যের আশ্বাসে তারা অনশন ভাঙ্গেন। এসময় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, কোটা ব্যবস্থা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে।

উপর্যুক্ত প্রেক্ষিতে ১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির সভায় সর্বসম্মত নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়:

“২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষ স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পুত্র-কন্যা কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে  শুধুমাত্র সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের জন্য ১% কোটা প্রযোজ্য হবে এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে কোন কোটা থাকবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।”

এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ দশক ধরে চলমান ৪-৫% ‘পোষ্য কোটা’কে শুধুমাত্র সহায়ক এবং সাধারণ কর্মচারীদের জন্য ১% এ নামিয়ে আনার কাজটি অত্যন্ত দুরূহ ছিল। উপাচার্যের বিশেষ উদ্যোগে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়।

কিন্তু ২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড-চলাকালে একদল শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে। এসময় তারা সেখানে কোনো খাবারও প্রবেশ করতে দেয়নি। সেদিন উপ-উপাচার্যদ্বয়, কোষাধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সেবা গ্রহণে আগত ব্যক্তিবর্গ প্রায় ১৩ ঘণ্টা প্রশাসন ভবন-১ এ অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার আলাপ-আলোচনা এবং তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনার সুযোগ না দিয়েই এক রকম জিম্মি করে পুত্র-কন্যাদের ভর্তির সুযোগ বাতিলের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করে।
এর পরদিন থেকেই শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে পুত্র-কন্যাদের ভর্তির আন্দোলন শুরু হয়। ৬ ও ৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ২ ঘন্টা করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। ৮ ও ৯ এবং ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ তারা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করে।

শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ দাবি করেন যে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সুবিধা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বন্ধ করাও এক ধরণের বৈষম্য। তারা এও উল্লেখ করেন যে, সম্প্রতি ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ভর্তিতে সরকারি স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা অফিসে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও বিভাগীয় সুবিধা হিসেবে সরকার ইকিউ কোটা (এডুকেশন কোটা) চালু করেছে। স্বয়ং সরকারের তরফ থেকে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার ব্যাপারে এমন পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে সেখানে রাবির ক্ষেত্রে কেন নয়। অধিকন্ত, জাহাঙ্গীরনগর এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সুবিধা প্রথম পর্যায়ে বাতিল/স্থগিত করলেও যথাসময়ে তারা এটিকে পরিমার্জিত রূপে পুনর্বহাল করে। পূর্ব থেকে যেসকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের সুবিধা প্রচলিত ছিল তার কোনটিই বন্ধ করা হয়নি। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাদ দিলেও মুক্তিযোদ্ধার পুত্র-কন্যা কোটা, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী কোটা ও বিকেএসপি কোটা মিলে প্রায় ৩ শত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। উল্লেখিত সকল ধরনের কোটায় ভর্তির এই সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত। ফলে কোনো শিক্ষার্থী মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় না বলে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তাদের দাবিতে উল্লেখ করেন।

এমন প্রেক্ষাপটে এই সুবিধা বাতিলের বিরুদ্ধে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা পুনরায় আন্দোলন শুরু করেন, যার এক পর্যায়ে তারা কয়েকদিন পূর্ণদিবস কর্মবিরতিও পালন করেন। এই অবস্থায় সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে বিষয়টি আদ্যোপান্ত খতিয়ে দেখে সুপারিশ প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষ ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)কে সভাপতি এবং দুইজন অনুষদ অধিকর্তা, একজন সিন্ডিকেট সদস্য, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, আইসিটি সেন্টারের পরিচালক ও একজন বিশিষ্ট শিক্ষককে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করে দেয়। কমিটি ৬টি সভায় মিলিত হয় এবং পর্যায়ক্রমে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে ১৯ ও ২৩ আগস্ট, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখসহ অন্যান্য দিন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করে। কমিটি অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পুত্র-কন্যা ভর্তির প্রচলিত রেওয়াজ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।

কমিটির তথ্যানুসন্ধান এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে মতবিনিময় থেকে প্রাপ্ত উদ্বেগের কারণ ও পরামর্শ, অভিমত ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় কেবলমাত্র কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর পুত্র-কন্যাদের ভর্তির ক্ষেত্রে দশটি শর্ত সাপেক্ষে ভর্তির জন্য সুপারিশ করে। সুপারিশসমূহ হচ্ছে,

১. কেবলমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ঔরসজাত/গর্ভজাত সন্তান এই ভর্তির সুযোগ পাবে;
২. ভর্তির প্রাথমিক আবেদনের জন্য বিজ্ঞাপিত যোগ্যতা এবং শর্ত এক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে;
৩. মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসনসংখ্যার অতিরিক্ত হিসেবে এ প্রক্রিয়ায় ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে;
৪. ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করে মেধা অনুসরণ করা হবে;
৫. ভর্তির আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্ধারিত শর্তাবলীসহ অবশ্যই ন্যূনতম পাস নম্বর থাকতে হবে;
৬. কোন বিভাগে ২ জনের অধিক ভর্তির সুযোগ থাকবে না;
৭. কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারির সন্তানকে তার কর্মরত বিভাগে ভর্তি করানো যাবে না;
৮. এ সুবিধার আওতায় নিজেদের মধ্যে ‘অটো মাইগ্রেশন’ ছাড়া শিক্ষার্থীর বিভাগ পরিবর্তনের অন্য কোনো সুযোগ থাকবে না;
৯. ভর্তির ক্ষেত্রে এবং পরবর্তীতে কোনো অভিভাবকের অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার বিষয় প্রমাণিত হলে ছাত্রত্ব বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে;
১০. এ সুবিধার আওতায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কোনোভাবেই আবাসিক হলে সিটের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেনা।

১৯-২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সাপ্তাহিক ছুটির পর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পুত্র-কন্যা ভর্তির সুযোগের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচি ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে ঘোষণা করা হয়েছিল। রাকসু, হল ছাত্র সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত ছিল, তাই সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার স্বার্থে ১৮ সেপ্টেম্বর ভর্তি কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। ভর্তি কমিটির সভায় সর্বসম্মতভাবে উপরিউক্ত শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে ভর্তির সুযোগের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। এটা পরিস্কার যে, ১৮ সেপ্টেম্বর প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার বিষয়ে কমিটির সিদ্ধান্ত না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অচলাবস্থা এড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদেরকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার কিংবা পিছিয়ে নেওয়ার জন্য বারংবার অনুরোধের পরও তারা অনড় অবস্থানে থাকায় রাকসু নির্বাচনকে বাধামুক্ত করতে সঙ্গতকারণেই প্রশাসন এরকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।

প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রত্যেকটি পর্যায়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে- এ বিষয়টি উপরে বর্ণিত সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধায় ভর্তির বিষয়টি অনুমোদিত হওয়ায় ঐ দিন বিকেল থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ সামাজিক মাধ্যমে নানা মন্তব্য প্রকাশসহ রাতে মিছিল করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সমবেত হয়ে স্লোগান দেয় এবং পরদিন শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বিক্ষোভ করে। শুক্রবার বিকেল থেকেই প্রথমে একজন ও পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবন-১ এর সামনে অনশন শুরু করে।

শনিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ দুপুরের পর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) তাঁর কার্যালয় থেকে বের হয়ে বাসভবনে যাওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী তাঁকে বহনকারী গাড়ী আটকে দিয়ে জোরপূর্বক তাঁকে বহনকারী গাড়ীর চাবি কেড়ে নেয়। তারা উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)কে গাড়ী থেকে নামতে বাধ্য করে ও বাসভবনে যেতেও বাধার সৃষ্টি করে। শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের মূল ফটক তালা দিয়ে আটকে দেয় ফলে তিনি অনতিদূরে জুবেরী ভবনে অবস্থানের প্রয়াস নেন। শিক্ষার্থীরা তাঁকে জুবেরী ভবনে প্রবেশেও বাধা দেয় ও টানা হেচড়া করে। এসময় প্রক্টর, জনসংযোগ প্রশাসক ও কয়েকজন বিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের নিবৃত করতে আসলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রতিও রুষ্ট ভাব ও মারমুখী আচরণ প্রকাশ করে। এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) জুবেরী ভবনের দোতলার একটি কক্ষে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা দোতলায় ও ছাদে উঠে পড়ে। ফলে সেখানে এক বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই প্রায় মধ্যরাতে আবাসিক হলগুলো থেকে কয়েকশত শিক্ষার্থী দলবদ্ধ হয়ে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং ভবনের প্রবেশ ফটক ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এসময় কিছু শিক্ষার্থী ভবনের সীমানা প্রাচীরের উপর উঠে পড়ে। ফলে এক উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিবৃন্দ উপাচার্যের সাথে দেখা  করেন এবং পরিস্থিতির অবনতি রোধে উপাচার্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর পুত্র-কন্যাদের ভর্তির বিষয়টি স্থগিত করেন।

এদিকে শনিবার সৃষ্ট উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উপাচার্য রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভা আহ্বান করেন। সভায় ২০ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে জুবেরী ভবনে সংঘটিত অবাঞ্ছিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে।

সিন্ডিকেটের একই সভায় ঐ দুঃখজনক ঘটনার উৎপত্তি, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি অভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অংশীজনদের সাথে আলাপ-আলোচনার জন্য উপাচার্যের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি  গঠন করা হয়।

সভায় আসন্ন রাকসু, হল ছাত্র সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ও সফলভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ শনিবারই রবিবার ও পরবর্তীতে সোমবার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে যান। ফলে রবিবার ও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ও একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের সাথে কর্মকর্তা-কর্মচারী নেতৃবৃন্দের আলোচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হলে ২৪ সেপ্টেম্বর বুধবার বেলা ১টা থেকে তারা তাদের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে। শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও কর্মবিরতি প্রতাহারের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর