রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২৪ আগস্ট ২০২৩:
আজ বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন দিবস’ পালিত হয়। ২০০৭ সালের আগস্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনের বার্ষিকী স্মরণে দিবসটি পালন করা হয়। এই উপলক্ষে এদিন বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন এমপি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। সেখানে নির্যাতিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রাবির সাবেক উপাচার্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক (ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ), অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল-মামুন (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা), ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন (প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান)সহ সেসময়ের নির্যাতিত শিক্ষার্থী কাজী আব্দুল লতিফ (বাংলা), মিজানুর রহমান, সরদার মো. আয়াজ ও সুমন কান্তি বাড়ই (মার্কেটিং), আজিম বিন কামাল উজ্জল প্রমুখ আলোচনা করেন।

রাবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন।

আলোচনাকালে অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান বলেন, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক ভাবধারায় বাংলাদেশ শাসন করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। এই প্রতিবাদকে স্তব্ধ করতে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও হয়রানিমূলক মামলা দেয়। কিন্তু পরিশেষে সত্যের জয় হয়। সবাই নির্দোষে মুক্তি পায়। এটা সম্ভব হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের ঐক্য ও দেশপ্রেমের চেতনার ফলে। আগামীতেও সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অপশক্তিকে রুখে দাড়াবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয় তা তাঁদের নৈতিকবোধের চেতনা থেকেই করেন। দেশ ও জাতির ক্লান্তিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ সর্বদা ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।

অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে ২০০৭ সালের সেই নির্যাতন ও হয়রানির নিন্দা জানিয়ে বলেন, হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে প্রতিবাদী স্বরকে স্তব্ধ করার জন্য যে চক্রান্ত করা হয় তা ব্যর্থ হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই দিবসটি যাতে নিয়মিত পালন করা হয় তার জন্যও কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এদেশের ছাত্র সমাজ সবসময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র সমাজ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়ে এসেছে। ২০০৭ সালের আগস্টে অগণতান্ত্রিক সরকারের দমন-পীড়নমূলক কর্মকাÐের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আবারও তাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে।

আলোচকগণ ২০০৭ সালের আগস্টে সেই সময়ের সরকার কর্তৃক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন-নির্যাতনের ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

সভার সভাপতি ও উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। তারা নৈতিক চেতনার কারণেই এর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিলসহ প্রতিবাদী সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়সমাজ সবসময়েই নৈতিক ও বিবেকবোধের দৃষ্টিকোণ থেকে সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে এবং তারাই জয়ী হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে উপাচার্য আরো বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় ছিল না। এটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় সমাজসহ জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। আগামীতেও দেশ ও জাতির ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের গৌরবময় ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর