রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আজ সোমবার ইরাসমাস+ কর্মসূচির আওতায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্পর্কে অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হুইটলি। উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম বক্তব্য রাখেন। রাবি ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিসিডিসি) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সেন্টারের সহকারী পরিচালক ড. মনিরা জান্নাতুল কোবরা স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা এই আয়োজন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে ইরাসমাস+ কর্মসূচির আওতায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে ও তার সুবিধা গ্রহণ করবে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বিশ্ব আজ গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। একারণে বিশ্বের কোন এক জায়গায় সমস্যা হলে তা অন্য অংশের মানুষকেও প্রভাবিত করে। বর্তমান সমাজের  বড় সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন ও তদ্জনিত বিপর্যয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন গবেষণা। এ ক্ষেত্রে  ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হলে গবেষণার মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদেরকে এগিয়ে আসার আহŸান জানান উপ-উপাচার্য। ধর্ম, বর্ণ বা গোত্র দিয়ে মানুষকে চিহ্নিত না করে সমান অধিকারের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই আয়োজন রাবি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইইউভুক্ত দেশগুলিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য দিবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি দীর্ঘ মেয়াদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হুইটলি বলেন, ইরাসমাস+ কর্মসূচিটি ইইউভুক্ত দেশগুলিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য সবচেয়ে ভাল কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থায় শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পান। এই কর্মসূচির আওতায়  বাংলাদেশ থেকে এবার ১৫১ জন শিক্ষার্থী ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও গবেষণা করতে যাচ্ছে। এই সংখ্যা বিশ্বে তৃতীয়। অতীতে বাংলাদেশকে ইউরোপের লোকজন নানা দূর্যোগপীড়িত হিসেবে জানতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে এই বৃত্তিপ্রাপ্তদের মাধ্যমে ইউরোপে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে। এই কর্মসূচির সফলতার কারণে এর আওতা প্রতি বছরই বাড়ছে। বর্তমানে শিক্ষা, জলবায়ু পরবর্তন ও রোবোটিক্সেও এর আওতা বিস্তৃত হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে এবং তারা বেশ সফল হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য এই বৃত্তির সংখ্যা আরো বাড়বে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, বর্তমান বিশ্বে পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেধাবী, তারা তাদের এই জ্ঞানকে ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বিরিনময়ের মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও উদ্ভাবনে অবদান রাখতে পারবে। এক্ষেত্রে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা চান। মিশ্রিত শিক্ষাপদ্ধতির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাথে ইইউ দেশের বিশ্ববিদ্যাগুলোর সংযোগের প্রতি তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্ব এখন উন্মুক্ত, তাই সকলের উচিত উন্মুক্ততার সুযোগগুলোকে গ্রহণ করা। এই তথ্য সেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইরাসমাস+ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে এবং পারস্পারিক যোগযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাবে বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, এই অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে রাবির প্রায় ৩০০ শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থী অংশ নেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিসিডিসি’র সহকারী পরিচালক মো. ইমরান হোসেন, প্রক্টর প্রফেসর মো. আসাবুল হক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ অনুষদ অধিকর্তা, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আজ সকাল ৯:৩০ মিনিটে ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হুইটলি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাবন ভবনে রাবি উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তারের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হোন। এসময় তাঁরা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে পারস্পরিক আগ্রহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।

প্রফেসর প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর