রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২৫ মে ২০২৪:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আজ শনিবার ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে রাবি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ বিষয়ক অভিযোগ কমিটি আয়োজিত এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিবের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম, রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের জজ জিয়াউর রহমান, এ্যাডভোকেট ইসমত আরা, কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে, আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আলিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদেকা বানু প্রমুখ বক্তৃতা প্রদান করেন।

কমিটির সদস্য-সচিব সহযোগী অধ্যাপক রনক জাহান সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।

সেমিনারে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, একজন মানুষ যখন তার শুভ চিন্তাগুলো হারিয়ে ফেলে তখন তার মানসিক রোগ হয়, মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয়। সে তার যৌক্তিক কারণে নানাবিধ হীন অপরাধ করে। তবে এটা ঘটে যেতে থাকলে সমাজে তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আমরা দেখি সমাজে যদি কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে তাহলে তা আইনের আওতায় আনা হয়। কিন্তু তাকে সচেতন করার জন্য যে কার্যক্রম প্রয়োজন তা নেওয়া হয় না। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসুক, তবে তাকে সচেতন করার পর। তারপরেও যদি তারা অপরাধ করতে থাকে, তবে তাকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। এমনকি সে হতে পারে পুরুষ, নারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী অথবা কর্মচারীসহ যে কেউ।

তিনি আরো বলেন, তবে আমরা যেন অপরাধের কথা গোপন না করি। কারণ সত্য গোপন করলে তা বিচারহীনতার আওতায় চলে যায়। সকলের দায়িত্ব থাকবে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা এবং কিভাবে তাকে অপরাধ থেকে দূরে রাখা যায় সে বিষয়ে সহায়তা করা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি হচ্ছে। জাতীয় মহিলা পরিষদের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ সালে ৭১৫ জন নারী নির্যাতন ও ২২৬ জন নারী ধর্ষনের শিকার হয়েছে। তারা নির্যাতিত হওয়া সত্তে¡ও সমাজে তাদেরকে হেয় হতে হয়েছে। শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে নয় ছেলেরাও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছে তা নিয়ে তারা কোথাও কোনো অভিযোগ করতে পারছে না। শিক্ষক কর্তৃক অনেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হলেও তারা অভিযোগ করতে পারেনা। এই পৃথিবীটা অনেক খারাপ জায়গা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। যতই আপনজন হোক না কেন মেয়েদেরকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। নারীদেরকে একটা প্লাটফর্ম নিশ্চিত করতেই হবে যেখানে নারীরা তাদের কথা বলতে ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে আবার তাদের সহপাঠীর দ্বারাও হতে পারে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনার তুলনায় অভিযোগ কম আসে। এই বিষয়ে আমাদের বিচার চাওয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। যার ফলে অনেক ঘটনা আমাদের আড়ালেই থেকে যায়।

অধ্যাপক তানজিমা জোহরা তার বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি রোধের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি জানান এই বিষয়ে একটি অভিযোগ বাক্স রাখা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের নাম-পরিচয় ছাড়াই অভিযোগ জমা দিতে পারে। আমরা নিয়মিত তা খুলে দেখি কোনো অভিযোগ জমা পড়েছে কিনা। আমরা আবাসিক হলগুলোতে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধে সেমিনার করার পরিকল্পনা করেছি। যদি সেখানে এমন সেমিনার আয়োজন করা যায় তাহলে যৌন হয়রানির মাত্র আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।

সেমিনারে অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতিগণসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে, পিএইচডি
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর