রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪:
আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের স্মরণে এ দিবসটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উদযাপন করা হয়। এদিন ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭:১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব শহীদ মিনারে ও সকাল ৭:৪৫ মিনিটে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইফতিখারুল আলম মাসউদ, অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, ইনস্টিটিউট পরিচালক ও বিশিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টর প্রফেসর মো. মাহবুবর রহমান, ছাত্র-উপদেষ্টা ড. মো. আমিরুল ইসলাম, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

সকাল ৮:৪৫ মিনিট থেকে রাবি স্কুল মাঠে খেলাধুলা ও সকাল ৯:৩০ মিনিট থেকে শেখ রাসেল মডেল স্কুল মাঠে আনন্দ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য এসব আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর আকতার বানুসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণও এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টায় সাবাস বাংলাদেশ চত্বরে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, রেঞ্জারের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য এই প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এসময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), উপ-উপাচার্য (শিক্ষা)সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ৩টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রদান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানান ও তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মো. সাইফুল ইসলাম, মো. বদরুল আলম ও মাহমুদ জামাল কাদেরীকে সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট উপহার দেন। আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. রফিকুল ইসলাম এবং রাজশাহী জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাসনাত বেগ। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মতিয়ার রহমান।

অনুষ্ঠানে আলোচকগণ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক বিশাল ক্যানভাস, এর প্রতিটি ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যে একতায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, বিজয়ের পর তা আর থাকেনি। সৃষ্ট এই বিভক্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও এর অর্জনকে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী কুক্ষিগত করে। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা হারিয়ে যায়।

তাঁরা আরো বলেন, আমাদের ছাত্র সমাজ সর্বদাই আমাদের আলোকবর্তিকা। তারা জাতির সংকটময় মহুর্তে আবারো জেগে ওঠে। ফলে আমরা জুলাই ২০২৪ এর বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারের উৎখাত দেখতে পাই। এর মধ্যে দিয়ে জাতির সামনে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা, স্বাধীন-সার্বভৌম, বৈষম্য-ভেদাভেদমুক্ত দেশ গড়ে তোলার অমিত সম্ভাবনা। আমাদের তরুণ সমাজের নেতৃত্বে আমরা তা অর্জন করতে পারবো বলে আশাবাদী।

অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দসহ উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। তাদের মর্যাদা প্রদর্শন, তাদের সম্মান দেওয়া আমাদের অবশ্য কর্তব্য। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত হয়ে আত্মঅধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যে গোটা জাতি একতাবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে। কিন্তু বিজয়ের পর জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডিত ইতিহাস শেখানোর অপপ্রয়াস চালানো হয়। এই মতলববাজির ফলে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ে। ধ্বংস হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও মূল্যবোধ। ক্রমাগত ইতিহাস বিকৃতি, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের ছাত্র সমাজ আবার মুখর হয়ে ওঠে। দেশকে বাঁচাতে তারা এগিয়ে আসে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা যে সংগ্রাম শুরু করে তার মধ্যে দিয়ে অর্জিত হয় জুলাই ২০২৪ এর বিপ্লব। এই সংগ্রামে জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ ফলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনকে সমর্থন করে বাংলাদেশের ইতিহাসের নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক ও তার দুঃশাসনকে উৎখাত করে। এই বিপ্লব আমাদের সামনে রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রে পরিবর্তন আনার অমিত সম্ভাবনার পথ খুলে দিয়েছে। এই সম্ভাবনাকে জাতির উজ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নাই। সেই লক্ষ্যে আমাদের একতাবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম সন্ধি ও রাউফু ইসলাম ইতু অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

দিবসের কর্মসূচিতে আরো ছিল সকাল ১০:১৫ মিনিটে চারুকলা অনুষদ চত্বরে শিক্ষার্থীদের র‌্যালি ও পোস্টার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০:৩০ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। উপাচার্য এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে উপ-উপাচার্যবৃন্দ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা থেকে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে শিক্ষক, অফিসার, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রীতি ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচ, প্রীতি ভলিবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও মিলাদ মাহফিল এবং সন্ধ্যা ৫:৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে শহীদ মিনার মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এছাড়া রাবি অফিসার সমিতি এবং সহায়ক কর্মচারী সমিতি, পরিবহন টেকনিক্যাল কর্মচারী সমিতি ও সাধারণ কর্মচারী ইউনিয়ন কর্তৃক নিজ নিজ উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর ক্যাম্পাস আলোকসজ্জিত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত কর্মসূচি ছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন বিভাগ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে।

প্রসঙ্গত, বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক প্রাঙ্গণে ১৫ ডিসেম্বর থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জুলাই বিপ্লবের আলোকচিত্র, স্মৃতি স্মারক, গ্রাফিতি ও পোস্টার প্রদর্শনী। দর্শনার্থীদের আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে এই প্রদর্শনী ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন।
ছবির ক্যাপশন:

প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর