রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ৫ অক্টোবর ২০২৪:
আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। “শিক্ষকের কণ্ঠস্বর: শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার” শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দিবসটি পালন করা হয়। এদিন সকাল ১০টায় এক শোভাযাত্রা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনের চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, হল ও বিভাগসমূহ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, শিক্ষক সম্মাননা ও দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান। উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার সাবেক উপাচার্য মো. রফিকুল ইসলাম।

এই আয়োজনে ৩ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. দাস বাসুদেব কুমার (রসায়ন বিভাগ), ড. এ কে এম আজহারুল ইসলাম (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এবং প্রফেসর ইমেরিটাস ও সাবেক উপাচার্য, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  চট্টগ্রাম) ও প্রফেসর মু. শামসুল আলম, বীর প্রতীক (ভুগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ) কে সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। উপাচার্য তাঁদের সম্মাননাসূচক উত্তরীয় ও স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কারও প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় স্নাতক পর্যায়ে ‘আমার দেখা সেরা শিক্ষক’ শীর্ষক বিষয়ে মো. শামিম আলম (সমাজকর্ম বিভাগ) প্রথম স্থান, রাফায়েতুল আহম্মেদ (নাট্যকলা বিভাগ) দ্বিতীয় স্থান ও মোসা. ফাহিমা খাতুন (উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ) তৃতীয় স্থান অধিকার করে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ‘আমার শিক্ষককে আমি যেভাবে দেখতে চাই’ শীর্ষক বিষয়ে মো. বায়েজিদ (আরবী বিভাগ) প্রথম স্থান, মো. মিনহাজুল আবেদীন (শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) দ্বিতীয় স্থান ও মো. হাবিবুর রহমান (রসায়ন বিভাগ) তৃতীয় স্থান অধিকার করে।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, শিক্ষকেরা জাতি গঠনের কারিগর। শিক্ষাদান একটা আদান-প্রদানের বিষয়। শিক্ষকরা ভালো কিন্তু ছাত্ররা ভালো নয় তাহলে হবে না। একজন শিক্ষক তখনই ভালো হবেন যিনি তার শিক্ষার্থীর জ্ঞানচক্ষুকে উন্মীলিত করতে পারেন; তিনিই ভালো শিক্ষক, যিনি তার শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। সামগ্রিকভাবে একজন শিক্ষকের মূল্যায়ন করতে গেলে তার শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে তা হবে না। জাতি গঠনে শিক্ষকতার সম্মান ও মর্যাদা অত্যন্ত উঁচুতে। শিক্ষকদের প্রতি আমরা আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন না হলে শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন হবে না।

প্রসঙ্গক্রমে, উপাচার্য বলেন, সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে যে অশুভ, অপশক্তির শৃঙ্খল ভেঙ্গে গেছে এই শৃঙ্খল ফিরে আসার আর সম্ভাবনা নাই। সেই বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের এই আন্দোলনের শুভ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ায় কাজ করে যেতে হবে।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, যে দেশে গুণীদের সম্মান করা হয় না সে দেশে গুণী জন্মায় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গুণী শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করে প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মানিত করলো। একজন শিক্ষক সর্বদাই শিক্ষক। একজন শিশুর প্রথম শিক্ষক তার মা-বাবা। তারা একজন শিশুকে আগামী দিনের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত করে। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানস গঠনের কুশলী কারিগর। শিক্ষকরা জলন্ত মোমের মতো। নিজেরা জ্বলে, আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনকে আলোকিত করেন। শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের জীবনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেন। শিক্ষাদান একটি মহাযাত্রা। আদর্শ শিক্ষক হতে হলে শিক্ষকদের হতে হবে দক্ষ, সৎ, নীতিনিষ্ঠ। আদর্শ জাতি গঠনে এমনই শিক্ষক প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দ তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৪ উদযাপন কমিটির সভাপতি জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
রাবি শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রফেসর মুর্শিদা ফেরদৌস বিনতে হাবীব অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর