রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১০ জানুয়ারি ২০২৪:
আজ ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হয়। এদিন সকাল ১০:৩০ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। সেখানে বিশেষ মোনাজাতও করা হয়। এসময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষসহ অন্যান্য বিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের আগে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বর থেকে এক শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে যায়।
বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে আলোচক ছিলেন লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ও বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। সেখানে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রবিউল ইসলামও বক্তব্য রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক, অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষসহ বিশিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজ ১০ জানুয়ারির প্রেক্ষাপটটা একটু ভিন্ন, কারণ গত কয়েকটা মাস ধরে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা অস্থিতিশীলতা ছিলো, সেটা আমরা কাটিয়ে উঠেছি। গত ৭ জানুয়ারি একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিপুল ভোটে বিজয় অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে খুব অল্প কথায়, এরকম ৪০ মিনিট, ৩০ মিনিটের বক্তব্যে কিংবা কয়েক পাতার বক্তব্যেও প্রকাশ করা আসলে অসম্ভব। কারণ বঙ্গবন্ধুর বিশালতা হাজার হাজার বছর ধরে আলোচনা করলেও প্রকাশ করা কঠিন একটি কাজ।
অধ্যাপক পান্ডে কিউবার মুক্তিকামী নেতা ফিদল কাস্ত্রোকে উদ্ধৃত করে বলেন, আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়া, বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইস দ্য হিমালয়া। আই হ্যাভ দাজ হ্যাড দি এক্সপেরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়া। এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় এরকম “আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য। আর এভাবেই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি।”
তারপরে আমরা যদি একটা জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ন করি তবে, আমরা কাদেরকে দেখি; আমরা মহাত্মা গান্ধীকে দেখেছি, আমরা অস্ট্রেলিয়ার স্যার হেনরি পার্কেসকে দেখেছি, আমরা তুরস্কের মোস্তফা কামালকে দেখেছি। যখন একজন ব্যাক্তি একটা দেশের জন্য এক্সট্রাঅর্ডিনারী কিছু করে তখনি কিন্তু তাকে এইধরণের উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু কিংবা জাতির পিতা হিসেবে তাঁর যে অর্জন তা দেশের মানুষের জন্য সারাজীবনের আন্দোলনের একটি রিকগনিশন ফরম দ্যা পিপল অব বাংলাদেশ। ১০ জানুয়ারিকে যদি আমরা বুঝতে চাই তাহলে বাংলাদেশের ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু কিভাবে ইনভলভড ছিলেন সে বিষয়টি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ পরবর্তী বাংলাদেশের তৎকালীন পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু যে কিভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন তা যদি না বুঝি আসলে ১০ জানুয়ারিকে বোঝা আসলে একটু কঠিন। এখানে আমি যদি তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করি তাহলে উনি ১৯৫৪ সালের জুনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৫৪ সালে যখন যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় তখন তাঁর মধ্যে বাঙালি বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, বা পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে একধরনের আগুন সবাই প্রত্যক্ষ করেছিলো। খুব অল্প বয়সে ১৯৫৬ সালে তিনি আতাউর রহমান খানের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। তখন দলকে শক্তিশালী করতে মন্ত্রী পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।
উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, এবারের এই দিন ১০ জানুয়ারি একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ৭ জানুয়ারি আমরা অভূতপূর্ব এক বিজয় অর্জন করেছি। যদিও তা নতুন কিছু নয়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আমাদের এর চেয়ে বেশি মাত্রায় বিজয় অর্জন হয়েছিল। মানুষ বিপুল মাত্রায় নৌকাকে জয়ী করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে তিনি ধারণ করেন, সেই নৌকার বিপুল বিজয় হয়েছে। আমি আমার পক্ষ থেকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আপনাদের সবার পক্ষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তাঁর যে নেতৃত্ব তা বিশ্বে আজ সমাদৃত। আসলে এটা খুবই স্বাভাবিক। জেনেসিস বলে একটা কথা আছে। উনি যেই ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন এবং যে কষ্ট উনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত করেছেন, যে কষ্টের মধ্য দিয়ে উনি বাংলাদেশকে অনুভব করেছেন তারই উপস্থিতি আজকে দেখতে পাচ্ছি। আজকে ২০২৪ সালের বাংলাদেশ, উন্নয়নের বাংলাদেশ। যে উন্নয়নের বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন, আমি যেখানে হাত দেই সেখানেই দেখি বাবার ছবি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের যে ঋণ, তা বঙ্গবন্ধুকে আসলে না বুঝলে, না জানলে বোঝা যাবেনা যে উনি বাঙালিকে নিয়ে কত ভাবতেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বাড়িতে ফিরেই বাবা দাদা-দাদীকে সালাম করেন, তারপর ছুটে যান আমার মায়ের কাছে। আবেগে জড়িয়ে ধরেন দু’জন দুজনকে। এই মুহূর্তটা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না। কী ধৈর্য্য, কী মহান ত্যাগ, কী দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এই মহা মিলন। এই কষ্ট এখনো বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও তাঁর পরিবার বয়ে বেড়াচ্ছে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজ সেই ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। আমি শুধু একটি কথা বলবো যে ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তথা বিশ্বাবাসী সেই ক্ষণের জন্য অপেক্ষা করেছে। যখন তিনি কারামুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেন। বাংলাদেশের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের রক্ত, দুই লক্ষ মা-বোন তাদের সর্বস্ব ত্যাগ হারিয়েছেন, তাদের সকল প্রচেষ্টা অপূর্ণ থেকে যেতো। সেই অপূর্ণতা আমরা বুঝেছি কখন, যখন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মাটিতে পা দিলেন তখন ৩ ঘন্টা লাগে সেই ঐতিহাসিক স্থান রমনায় আসতে, যেখানে তিনি বক্তব্য দিবেন। সেদিন মানুষের উল্লাস, কান্নাকাটি, মানুষের দোয়া, মানুষের জয়োল্লাস সারা বিশ্ববাসী দেখেছে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বলেন, আজ থেকে ৫২ বছর আগে আমাদের বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মুক্ত মাটিতে পা রেখেছেন। তিনি তাঁর প্রায় ১৭ মিনিটের বক্তব্য বা ভাষণে যে সমস্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করেছেন, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, বাংলার স্বাধীনতার জন্য আমাদের মিত্র শক্তিগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর বক্তৃতায় এই দেশ, বাংলাদেশ কিভাবে আগামীতে পরিচালিত হবে, রাষ্ট্রব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো ইত্যাদি সম্পর্কে দিকনির্দেশনামূলক কথা বলে গেছেন। আমরা আজকে ৭১ এর পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেটির জন্য আমরা নিন্দা জানাই, প্রতিবাদ জানাই। ৭৫ এর পরে তাঁরই নীতি আদর্শ ধরে তাঁরই কন্যা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন। আমি আশা করবো আমরা সবাই মিলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে একজোটে কাজ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সোনার বাংলা আমরা বাস্তবায়ন করবো। যদি আমরা তা করতে পারি তাহলেই আমি মনে করি আমাদের জাতির পিতার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে।
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর