রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ৮ অক্টোবর ২০২৪:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ আজ মঙ্গলবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। নবাগত শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও শিক্ষা সামগ্রী উপহার দিয়ে বরণ করে নেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীব। কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিকের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা অনুষদের অধিকর্তা প্রফেসর মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ও বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা প্রফেসর নাসিমা আখতার।
অনুষ্ঠানে ছাত্র-উপদেষ্টা ড. মো. আমিরুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তৃতা দেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে প্রক্টর প্রফেসর মো. মাহবুবর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. শেখ সা’দ আহমেদও বক্তব্য রাখেন। নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে ফার্মেসী বিভাগের লাবিবা ইসলাম ও ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শাফিন আহমেদ এবং সিনিয়র শিক্ষার্থী মো. বায়েজীদ (আরবী বিভাগ) ও শামিমা আফরোজ (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ) শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য নবাগত শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনন্দন ও স্বাগত জানিয়ে বলেন, শিক্ষা জ্ঞান অর্জনের একটি প্রক্রিয়া। ছাত্র পরিচয়ে শেখার চেয়ে বড় গৌরব ও আনন্দের বিষয় আর নেই। যারা শিক্ষায় অবিরত রত আছে তারা সর্বদাই তরুণ থাকে। শিক্ষার এই পবিত্র অঙ্গন থেকে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যেন দেশ-জাতি ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত হয়। তবেই এই জ্ঞান অর্জনের সার্থকতা আসবে। শিক্ষার্থীদের তিনি মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে আহ্বান জানান। এই ক্যাম্পাসে মুক্ত চিন্তার পরিবেশে শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষার্থীরা প্রয়াসী হবে এটা একান্ত প্রত্যাশিত।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনকে স্বচ্ছন্দ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বদাই সচেতন। তবে আমাদের সীমাবদ্ধতাও আছে। সেটা বিবেচনায় নিয়েই আমরা সমস্যা সমাধানে নিরন্তর রত আছি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, দুটো বড় আবাসিক হল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। হল দুটো চালু হলে আবাসন সমস্যার অনেক সুরাহা হবে। কোনো সমস্যাই সমাধানের ঊর্ধ্বে নয়। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস ও সহমর্মিতায় যেকোনো সমস্যাই সমাধান করা যায়।
গত জুলাই-আগস্ট মাসের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, এই বিপ্লব আমাদের নতুন ও সুন্দর দেশ গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নতুন এই বাংলাদেশে সকলের সমান মর্যাদা ও অধিকার থাকবে। ছাত্ররা নির্ভয়ে সম্মানের সাথে এই ক্যাম্পাসে জ্ঞানার্জনে এগিয়ে যাবে। এই ক্যাম্পাসে কোনো হয়রানি ও র্যাগিং থাকবে না।
উপাচার্য নবীন শিক্ষার্থীদের সার্বিক সাফল্য কামনা করে তাদের দেশের মাটিতে পা রেখে বিশ্বকে গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে রাবি কোষাধ্যক্ষ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চশিক্ষার আলোয় জীবনকে আলোকিত করা, সেই শিক্ষাকে ভবিষ্যতে সাফল্যের বাহন হিসেবে ব্যবহার। ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। সেই প্রতিযোগিতায় যারা সফল হয়েছে তারাই এখানে ভর্তি হয়েছে। এখন তাদের মেধা ও মননের প্রয়োগ করে চলতে হবে। নিজ অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এই সচেতনতাই তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলবে কর্তব্যবোধ। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানার্জনের জন্য অনেক কিছুর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গ্রন্থাগার। এখানে যেমন ছাপানো বই আছে তেমনি আছে দুনিয়াজোড়া তথ্য মহাসারণীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জ্ঞান অন্বেষণের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থী সে সুযোগ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শিক্ষার্থীদের সাফল্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার টিএসসিসি’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রফেসর মুর্শিদা ফেরদৌস বিনতে হাবীব অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবীনবরণ শেষ হয়।
প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর