আমরা জানি যে, বহু বৈশিষ্টের কারণেই এই ভাষণটি world’s documentary heritage বা বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থাৎ ভাষণটি এখন আর বাঙালির নয়, গোটা বিশ্ব মানবতার সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই ভাষণটি একটি কালোত্তীর্ণ ভাষণ অর্থাৎ সর্বকালের একাত্তর সালে ভাষণটি যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল, এখনও ততটাই আছে এবং ভবিষ্যতেও এই ভাষণটি প্রাসঙ্গিক থাকবে। এই ভাষণটি সারাবিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত ও শ্রবণকৃত ভাষণ। আরেকটি বৈশিষ্ট্য বলা হয় যে, এটি একটি শ্রেষ্ঠ কূটনৈতিক ভাষণ। এই সব কথা নানা গবেষক বলেছেন। আমরা কাছে কখনোই মনে হয়নি এই ভাষণটি হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চে রেসকোর্স ভাষণ দিবেন এটি নির্ধারিত ছিলো। এই ভাষণ শোনার জন্য লাখো বাঙালি রেসকোর্স ময়দানে, আজকে যেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেখানে সমবেত হবেন সেটিও অবধারিত ছিলো। এই ভাষণে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকরা কেঁপে উঠবেন, সেটিও তারা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন বলেই তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা এই ভাষণটির তাৎক্ষণিক সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিলো। যদিও পরেরদিন সকাল ৮টায় তারা এই ভাষণটি প্রচার করতে বাধ্য হয়। যদি ৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়া না হতো তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসতো না। ৭ই মার্চের ভাষণ এতই গুরুত্বপূর্ণ, এতই শক্তিশালী যে আমি আবারও উচ্চারণ করছি যদি ৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়া না হতো তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।
আলোচনায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ৭ই মার্চ একটি ঐতিহাসিক দিবস। বঙ্গবন্ধু এই দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন এজন্যই শুধু নয় এটি ঐতিহাসিক, সেজন্যই যে তার এই নির্দেশে মুক্তিপাগল বাঙালি তাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য ঝাপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এই বক্তৃতায় তিনি অনেকগুলো বিষয় উল্লেখ করেছেন। প্রথমেই স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে আমাদের নির্যাতন, হত্যা, নিপীড়ন ও বঞ্চনার ইতিহাস। উনি বিশ্ববাসীকে সেদিন জানিয়ে দিয়েছিলেন যে বাঙালির এই ইতিহাস রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করার ইতিহাস। বাঙালি জাতিকে প্রতি মূহুর্তে রক্ত দিতে হয় তাদের মুক্তির জন্য, তাদের অধিকারের জন্য। বিশ্ববাসীর মত তিনি এই জাতির মুক্তির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। মানুষ হাজারো ভাষণ দেয়, আমরা শুনি কিন্তু যে ভাষণটি মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়, মানুষের অন্তরকে অনুপ্রাণিত করে, মানুষকে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে মুক্তির পথে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল সেটি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে চিনেছেন, বাঙালি জাতির ইচ্ছাকে জেনেছেন, এই বাঙালি জাতিকে সম্পূর্ণরূপে জেনেই তিনি এই ভাষণটি দিয়েছেন। ভাষণটি ছিল অলিখিত, তিনি ভাষণটি দিয়েছিলেন তার বিশ্বাস থেকে, তিনি যে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য কেঁদেছেন সেই কান্না, নিপীড়ন, জেল-জুলুম ও অত্যাচারের অনুভব থেকে ভাষণটি দিয়েছেন।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর তার বক্তব্যে বলেন, ৭ মার্চের যে ভাষণ ছিল সেটাকে আমরা Informal declaration of independence বলি। এটা পরিষ্কার এবং সত্য। প্রায় ১৯ মিনিটের এই ভাষণটি কোনো লিখিত ভাষণ ছিল না। ভাষণটি মূলত ছিল বঙ্গবন্ধুর আবেগ, দেশের মানুষের প্রতি ভালো লাগা, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এখানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার কথা বলেছেন, জনগণের কী করণীয় সেটা বলেছেন। আমরা বিবেকবান মানুষ হিসেবে ব্যথিত হই যখন এই স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সেটা পাঠ করছেন।
অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর