রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭ জুলাই ২০২৫:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) জুলাই ২০২৪ এর বিপ্লববার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনার সিরিজের শেষ সেমিনার গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিকেল ৩:৩০ মিনিটে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ‘শহীদ আবু সাঈদ ও জাগ্রত চেতনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) প্রফেসর মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান। সেমিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফিশারীজ অনুষদের অধিকর্তা প্রফেসর মো. মোস্তাফিজুর রহমান মন্ডল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইফতিখারুল আলম মাসউদ ও আইসিটি সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর মো. ছাইফুল ইসলাম। উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জুলাই যোদ্ধা মাহাইর ইসলাম (আরবী বিভাগ), প্রত্যয় সিনদীদ (আইন বিভাগ) ও সজীব মেহেদী (সমাজকর্ম বিভাগ)। সেখানে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার স্বাগত বক্তব্য রাখেন ও সেমিনার সঞ্চালনা করেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথিবৃন্দ এবং আলোচকগণ বলেন, আমাদের অধিকারের জন্য বার বার আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। এসব আন্দোলন সংগ্রামে সবসময়ই একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। যেমন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে আসাদের মৃত্যু, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে নূর হোসেনের মৃত্যু তেমনি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আবু সাঈদের মৃত্যু। তাঁর মৃত্যুতে আপামোর জনসাধারণ রাজপথে নেমে আসে, আন্দোলন এক নতুন মাত্রায় গতিশীল হয়ে উঠে। এই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রমাণ করলো অধিকার আদায়ের দাবিতে তারা জীবন দিতে পারে। তাদের অবদান আমাদের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ক্ষুদ্র স্বার্থে জাতিকে বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। অন্যথায় ’২৪ এর জুলাইয়ের মতোই আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐক্যবিনষ্টকারী সকল অপশক্তিকে পরাস্ত করে বিপ্লবের চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করবে ছাত্রজনতা।
সেমিনারে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের অধিকারের জন্য আত্মদান বৃথা যেতে পারে না। জুলাই বিপ্লবের মহানায়ক শহীদ আবু সাঈদ। তিনি আমাদের তরুণদের কাছে বিপ্লবের আইকন। আবু সাঈদের মৃত্যু আমাদের মনের ভয় ভেঙ্গে দিয়েছিল। আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম আমাদের কাক্সিক্ষত ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তির লড়াইয়ে। আবু সাঈদ আমাদের জন্য অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ছাত্রজনতার সম্মিলিত সংগ্রামে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের কাক্সিক্ষত বিজয় অর্জন হয়। আবু সাঈদ দেখিয়ে দিয়ে গেছে আবেগ না থাকলে জীবন দেওয়া যায় না। আমাদের তরুণ প্রজন্ম আবেগী। তাদের আবেগ আছে বলেই আমরা বিপ্লবে বিজয় অর্জন করেছি। রক্তক্ষয়ী এই বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত মুক্তি টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ক্ষমতার আকাক্সক্ষায় বিপ্লবের মূল চেতনা যেন হারিয়ে না যায় আমাদের সেদিকে নজর রাখতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম সে বিষয়ে সদা সচেতন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেমিনারের সভাপতি উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, জুলাই বিপ্লব ছিল আমাদের দেশপ্রেমের কঠিন পরীক্ষা। আমরা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি বলেই ইপ্সিত বিজয় অর্জন করতে পেরেছি। আমরা ইতিহাসের সঠিক দিকে ছিলাম বলেই বিজয় অর্জিত হয়েছে। এই সংগ্রামের নায়ক হচ্ছে বীর আবু সাঈদ। তার শাহাদাৎ ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। তার আত্মদান মানুষকে ঘর থেকে রাজপথে নিয়ে এলো, ক্ষোভে ফেটে পড়ল মুক্তিকামী মানুষ। আবু সাঈদের বীরত্ব এক অসাধারণ কীর্তি গাথা। শেখ হাসিনার অপশাসনের বয়স ছিল ১৬ বছর। কিন্তু আবু সাঈদের মুত্যু সেই দুঃশাসনের অবসানের সূচনা করেছিল। আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ন্যায়ের জন্য, ইনসাফের জন্য। বিপ্লবে বিজয়ের পর এর বিশাল অর্জন ধরে রাখা এখন আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আমাদের তরুণ প্রজন্ম সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বদা সচেতন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রফেসর মো. আখতার হোসেন মজুমদার
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর