রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৭ মার্চ ২০২৪:নানা আয়োজন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আজ রবিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হয়।

এদিন সকাল ৮:৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এসময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. তারিকুল হাসান, প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তাঁরা বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। পরে শিক্ষক সমিতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, বিভিন্ন হল, বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং অন্যান্য পেশাজীবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

সকাল ৯টায় সাবাস বাংলাদেশ চত্বর থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। সকাল ৯:৪৫ মিনিটে শেখ রাসেল মডেল স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু সমাবেশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর নির্বাচিত অংশ থেকে কুইজ প্রতিযোগিতা। সকাল ১০:৩০ মিনিটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু সমাবেশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারে রোজনামচার নির্বাচিত অংশ থেকে কুইজ প্রতিযোগিতা। উভয় আয়োজনের উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এসময় উপ-উপাচার্যবৃন্দসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল ৩টায় শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এই আয়োজনে মুখ্য আলোচক ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার প্রধান অতিথি এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ।

আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সালে, বর্তমান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ঊর্ধ্বতন পুরুষ ছিলেন শেখ বোরহান উদ্দিন। তাঁর পরিবার ছিল বাংলার আটপৌড়ে মধ্যবিত্ত ও স্বচ্ছল। বিখ্যাত মানুষের ক্ষেত্রে তাদের জীবনে পরিবেশের প্রভাব হয় প্রকট। ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি লক্ষ্য করা যায়। ১৯৪২ সালে তিনি যখন কোলকাতায় যান তখন তাঁর মধ্যে দেশ-জাতি-সমাজ সম্পর্কে জানার অসাধারণ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। এসময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ মুসলিম লীগের অন্যান্য নেতার সংস্পর্শে আসেন ও ক্রমে বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র ধারণায় অনুপ্রাণিত হোন। বাঙালি জাতির জন্য তাঁর চিন্তা-চেতনার কারণে তিনি বার বার কারাবরণ করেছেন। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে সরে যাননি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এক উদারনৈতিক বাংলাভাষিক জাতিরাষ্ট্র। সে লক্ষ্যে তিনি সফল হয়েছেন কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের ফলেই তা অর্জন সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু আরো চেয়েছিলেন একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ। বাকশাল ছিল সুচিন্তিত চেতনার ফল। তিনি বাঙালি জাতির মনে যে উদার জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন আজও তা বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু তাঁর চেতনা অবিনাশী। বঙ্গবন্ধুর উত্তরকালে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা আজ আবার বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার ধারাবাহিকতায় স্মার্ট বাংলাদেশের পথে অবিরত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতির জন্য নয়, তিনি সারাবিশ্বের মানবজাতির জন্যও ভেবেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমি শোষিতের পক্ষে, গণমানুষের পক্ষে। তাইতো তিনি বিশ্বনেতা হতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন উদার অভ্যুদ্বয়ের নেতা। তাঁর উদারতায় প্রতিপক্ষও হয়েছিল গুণগ্রাহী। কিন্তু এই উদারতায় হয়েছিল কাল। যারা বাঙালি জাতির স্বাধীনতা চায়নি, জাতির কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি তারা স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিনবছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে বিরল।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু একজন নেতা, একজন রাষ্ট্রনায়ক হলেও ছিলেন পিতা। তিনি শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি শিশুদের কল্যাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যার সুফল মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের শিশুরা ছাড়াও আজকের শিশুরা ভোগ করছে। বঙ্গবন্ধুর গৃহিত পদক্ষেপের মধ্যেই আছে তাঁর নেতৃত্বের পরিচয়।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তার বক্তব্যে বলেন, যেভাবেই দেখো সুর্য কিন্তু একটাই। বঙ্গবন্ধুও তাই। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি বাঙালি জাতিকে মুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে গেছেন, অর্জন করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুকে বিচার করতে হবে ইতিহাসের নিরীখে। ইতিহাস কখনো অসত্য বলেনা। বঙ্গবন্ধুকে জানার শেষ নেই। সে এক মহাজীবনের মহাগ্রন্থ। তাঁকে গভীরভাবে জানতে হলে তাঁর সম্পর্কে চর্চা করতে হবে। তাঁর লেখা ও তাঁর সম্পর্কে লেখাগুলি পড়তে হবে। তার মধ্য দিয়েই আমরা পাব প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর সন্ধান।
সভাপতির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন বহুমাত্রিক চিন্তা-চেতনার উদার মানসিকতার নেতা। তিনি যেমন জাতির কল্যাণে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেন তেমনি তাঁর উদারতায় প্রতিপক্ষও হতো উপকৃত। তিনি ছিলেন কড়ি ও কোমলের অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ। তিনি শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাইতো তাঁর জন্মদিন আজ জাতীয় শিশুদিবস। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের মাধ্যমেই আমরা আমাদের শিশুদেরকেও ভালোবাসা দিতে পারবো।
দিবসের কর্মসূচিতে আরো ছিল বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া এবং সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা।

প্রসঙ্গত, এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে রাবি স্কুলে কেক কাটার পরিবর্তে সেই অর্থে স্থানীয় এসওএস শিশুপল্লীর আবাসী ১৩৫ জন শিশু ও মায়ের জন্য ইফতার ও রাতের খাবার উপহার দেওয়া হয়। এছাড়াও দুটি কেকও প্রদান করা হয়। রাবির পক্ষে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ শিশুপল্লী কর্তৃপক্ষের নিকট কেক ও উপহার সামগ্রি হস্তান্তর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করছে।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর