রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ৯ নভেম্বর ২০২৩:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। নবাগত শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা ও শিক্ষা সামগ্রী উপহার দিয়ে বরণ করে নেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক।

অনুষ্ঠানে ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ ও প্রক্টর অধ্যাপক মো. আসাবুল হক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তৃতা করেন। এছাড়া নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের নাফিসাতুল নাঈম ও বাংলা বিভাগের সজল কুমার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপাচার্য নবাগত শিক্ষার্থীদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গণে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শিক্ষা জ্ঞান লাভের একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে নিজ জীবন ও সমাজকে আলোকিত করা শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। শিক্ষার আলোয় সুশিক্ষিতরা দেশ ও জাতির সম্পদ। শিক্ষা মানুষের পরমাত্মাকে মানবকল্যাণে বিকশিত করে। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। শিক্ষা সেই সম্ভাবনাকে শক্তি ও সম্পদ বিকাশের একটি বাহন। নবীন শিক্ষার্থীরা এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের সম্ভাবনাকে বিকশিত করে তাকে দেশ, জাতি ও সমাজের কল্যাণে নিবেদিত করবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, শিক্ষা জীবন সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, সামাজিকীকরণের সময়। নবীন শিক্ষার্থীরা সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার সঙ্গে সময়ানুবর্তিতা মেনে চলবে এটা একান্ত প্রত্যাশিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পবিত্র অঙ্গনে নানা মত, নানা স্থানের শিক্ষার্থীরা এসেছে। তাদের সবার লক্ষ্য এক আর তা হচ্ছে উচ্চশিক্ষার আলোয় নিজেদের বিকশিত করা, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের মেধা ও মননকে নিবেদিত করা। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা একটি পরিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যা কিছু শুভ, যা কিছু কল্যাণকর তাতেই হোক এই শিক্ষার্থীদের আবাহন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি মেধা ও মননশীলতা বিকাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা সেসবের সুযোগ গ্রহণ করে নিজেদের সুস্থ্যতা বজায় রাখা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পারদর্শিতা অর্জন এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত নানা কাজের মাধ্যমে নিজেদের বিকশিত করবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার এক পবিত্র অঙ্গন। এখানে মুক্ত চিন্তার পরিবেশে শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিবেদিত করবে এটা একান্ত প্রত্যাশিত। তারা নিবেদিতভাবে শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের বিকশিত করে সম্ভাবনার বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরন্তর রত থাকবে এটা সবাই আশা করে। তারা সে আশা পূরণ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে তারা কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মুক্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল হতে ও সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে। শিক্ষার্থীরা এই পরিবেশের যা কিছু শুভ তা গ্রহণ করে নিজেদের দেশের উন্নয়নে নিবেদিত করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এই শিক্ষার্থীরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও তার ধারাবাহিকতায় পঞ্চম শিল্প বিপ্লবে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে এক সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অপর বিশেষ অতিথি কোষাধ্যক্ষ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পবিত্র অঙ্গণে শিক্ষার্থীদের আসার একটিই লক্ষ্য, আর তা হলো উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা। তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান ও সৃজনশীলতাকে দেশের উন্নতি ও কল্যাণে ব্যবহার করতে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সুনাগরিক হিসেবে জীবন গড়তে হলে শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজন নিষ্ঠা, একাগ্রতা, সময়ানুবর্তিতা। নবীন শিক্ষার্থীরা সেসব শুভবোধেও উদ্বুদ্ধ হবে বলে তিনি প্রত্যাশা জ্ঞাপন করেন।
সভাপতির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার শীর্ষ লক্ষ্য হচ্ছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও সেই শিক্ষাকে ভবিষ্যত জীবনে সাফল্যের বাহন হিসেবে ব্যবহার। শিক্ষার্থীরা সেই লক্ষ্য অর্জনে অধ্যাবসায় ও সময়নিষ্ঠা মেনে পড়াশোনায় নিজেদের নিবেদিত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এক কঠিন প্রতিযোগিতার বিষয়। সে প্রতিযোগিতায় যে শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, আগামী দিনে তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার ধারাবাহিকতায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নেও সফল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত জ্ঞান ও মেধা হোক তাদের অমিত শক্তির অননিঃশেষ উৎস এই প্রত্যাশার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, অনুষদ অধিকর্তা, হল প্রাধ্যক্ষ, বিভাগীয় সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর