রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১০ মার্চ ২০২৪:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ: বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য দিবস উপলক্ষে আজ রবিবার আলোচনা সভা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ১০:৩০ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত বিশিষ্ট নাট্যকার মলয় কুমার ভৌমিক। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. তারিকুল হাসান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
আলোচক অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে ৭ই মার্চের ভাষণের কথা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। জ্যাকব এফ ফিল্ড একজন ব্রিটিশ গবেষক। খ্রীস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ আড়াই হাজার বছরের একটি গবেষণা তিনি তুলে ধরেছেন।  তার এই গবেষণামূলক গ্রন্থটির নাম  “We Shall Fight on the Beaches: The Speeches that Inspired History” এই গ্রন্থটির ২০১ পৃষ্ঠায়  “The struggle this time, the struggle for Independence” শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই বইয়ে আরো বলা হয়েছে ১৮৬৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে এমন শীর্ষ পাঁচটি ভাষণের একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ।

আমরা জানি যে, বহু বৈশিষ্টের কারণেই এই ভাষণটি  world’s documentary heritage  বা বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থাৎ ভাষণটি এখন আর বাঙালির নয়, গোটা বিশ্ব মানবতার সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই ভাষণটি একটি কালোত্তীর্ণ ভাষণ অর্থাৎ সর্বকালের একাত্তর সালে ভাষণটি যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল, এখনও ততটাই আছে এবং ভবিষ্যতেও এই ভাষণটি প্রাসঙ্গিক থাকবে। এই ভাষণটি সারাবিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত ও শ্রবণকৃত ভাষণ। আরেকটি বৈশিষ্ট্য বলা হয় যে, এটি একটি শ্রেষ্ঠ কূটনৈতিক ভাষণ। এই সব কথা নানা গবেষক বলেছেন। আমরা কাছে কখনোই মনে হয়নি এই ভাষণটি হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। বঙ্গবন্ধু  ৭ই মার্চে রেসকোর্স  ভাষণ দিবেন এটি নির্ধারিত ছিলো। এই ভাষণ শোনার জন্য লাখো বাঙালি রেসকোর্স ময়দানে, আজকে যেটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সেখানে সমবেত হবেন সেটিও অবধারিত ছিলো। এই ভাষণে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকরা কেঁপে উঠবেন, সেটিও তারা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন বলেই তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা এই ভাষণটির তাৎক্ষণিক  সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিলো। যদিও পরেরদিন সকাল ৮টায় তারা এই ভাষণটি প্রচার করতে বাধ্য হয়। যদি ৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়া না হতো তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসতো না। ৭ই মার্চের ভাষণ এতই গুরুত্বপূর্ণ, এতই শক্তিশালী যে আমি আবারও উচ্চারণ করছি যদি ৭ই মার্চের ভাষণ দেওয়া না হতো তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের এই ভাষণে উদ্দীপিত হয়ে বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে, অর্জন করে স্বাধীনতা।

আলোচনায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ৭ই মার্চ একটি ঐতিহাসিক দিবস। বঙ্গবন্ধু এই দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন এজন্যই শুধু নয় এটি ঐতিহাসিক, সেজন্যই যে তার এই নির্দেশে মুক্তিপাগল বাঙালি তাদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য ঝাপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এই বক্তৃতায় তিনি অনেকগুলো বিষয় উল্লেখ করেছেন। প্রথমেই স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে আমাদের নির্যাতন, হত্যা, নিপীড়ন ও বঞ্চনার ইতিহাস। উনি বিশ্ববাসীকে সেদিন জানিয়ে দিয়েছিলেন যে বাঙালির এই ইতিহাস রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করার ইতিহাস। বাঙালি জাতিকে প্রতি মূহুর্তে রক্ত দিতে হয় তাদের মুক্তির জন্য, তাদের অধিকারের জন্য। বিশ্ববাসীর মত তিনি এই জাতির মুক্তির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। মানুষ হাজারো ভাষণ দেয়, আমরা শুনি কিন্তু যে ভাষণটি মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়, মানুষের অন্তরকে অনুপ্রাণিত করে, মানুষকে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে মুক্তির পথে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল সেটি। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে চিনেছেন, বাঙালি জাতির ইচ্ছাকে জেনেছেন, এই বাঙালি জাতিকে সম্পূর্ণরূপে জেনেই তিনি এই ভাষণটি দিয়েছেন। ভাষণটি ছিল অলিখিত, তিনি ভাষণটি দিয়েছিলেন তার বিশ্বাস থেকে, তিনি যে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য কেঁদেছেন সেই কান্না, নিপীড়ন, জেল-জুলুম ও অত্যাচারের অনুভব থেকে ভাষণটি দিয়েছেন।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর তার বক্তব্যে বলেন, ৭ মার্চের যে ভাষণ ছিল সেটাকে আমরা  Informal declaration of independence বলি। এটা পরিষ্কার এবং সত্য। প্রায় ১৯ মিনিটের এই ভাষণটি কোনো লিখিত ভাষণ ছিল না। ভাষণটি মূলত ছিল বঙ্গবন্ধুর আবেগ, দেশের মানুষের প্রতি ভালো লাগা, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এখানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার কথা বলেছেন,  জনগণের কী করণীয় সেটা বলেছেন। আমরা বিবেকবান মানুষ হিসেবে ব্যথিত হই যখন এই স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সেটা পাঠ করছেন।

অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর